মোংলায় বড় জাহাজ ভেড়াতে বড় উদ্যোগ

Passenger Voice    |    ০১:৪৩ পিএম, ২০২৪-০৩-১৯


মোংলায় বড় জাহাজ ভেড়াতে বড় উদ্যোগ

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে চাপ বাড়ছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায়। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। সেতুর কল্যাণে রাজধানীর সবচেয়ে কাছের এ বন্দর দিয়ে পোশাক শিল্পের পণ্যও যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বেড়েছে গাড়ি আমদানি। এছাড়া বন্দরের আশপাশে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা।

তবে সব মিলিয়ে এক মধুর সমস্যায় পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের আশপাশে ড্রাফট (পানির গভীরতা) মাত্র ৭ মিটার। ফলে বড় জাহাজ ভিড়তে পারছে না এ বন্দরে। বড় মাদার ভেসেল ভেড়াতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোংলা বন্দরের জেটিতে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতু চালুর পর প্রতিদিনই ক্রমান্বয়ে চাপ বাড়ছে মোংলা বন্দরে। চাপ সামলাতে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের উন্নয়ন, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, কন্টেইনার ইয়ার্ড সংস্কার, বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ২৩ কিলোমিটার ড্রেজিং ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, চ্যানেলটি সচল রাখতে ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিতে হচ্ছে। নাব্য পাঁচ বছর ঠিক রাখতেই আইএমইডি’র সুপারিশ অনুযায়ী ‘মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং’ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে দেখা গেছে, পারফরম্যান্স বেজড সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের নাব্য সংরক্ষণ করা এবং পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ বছরে কম বেশি ৩৪৭ দশমিক ৫০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে।

ঢাকার সবচেয়ে নিকটতম বন্দর মোংলা। এজন্য পাঁচ বছর মেয়াদের একটি পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি। সে ধারাবাহিকতায় আমরা আধুনিক ড্রেজার কিনবো। ফলে মোংলা বন্দরের আশপাশের ড্রাফট সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার হবে- মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মোংলা বন্দর চ্যানেলে হারবার এলাকায় ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার জাহাজ হ্যান্ডেল করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে পশুর চ্যানেলের আউটার বারে ড্রেজিং করে কাঙ্ক্ষিত গভীরতা সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু পলি জমার কারণে গভীরতা কমায় আউটার বারে হারবার চ্যানেলে ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হয়। এ এলাকায় অর্জিত গভীরতা ধরে রাখার জন্য রাজস্ব বাজেটে অনিয়মিতভাবে ড্রেজিং করা হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে আউটার বারে নাব্য বজায় রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত সংরক্ষণ ড্রেজিং করা প্রয়োজন।

বন্দরের জেটিতে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ইনার বার এলাকায় ২৩ কিলোমিটার এলাকায় ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট অর্জনের লক্ষ্যে ২৩৭ দশমিক ৫৫ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং চলমান। এ কাজ জুন ২০২৪-এর মধ্যে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত আছে। এ এলাকায়ই অর্জিত নাব্য ধরে রাখার জন্য সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটেই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) যুগ্মসচিব ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে মোংলা বন্দরের চাপ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। কিন্তু বন্দরের আশপাশে ড্রাফট মাত্র ৭ মিটার। ফলে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এজন্য মোংলা ঘিরে আমরা মেগা উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ ঢাকার সবচেয়ে নিকটতম বন্দর মোংলা। এজন্য পাঁচ বছর মেয়াদের একটি পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি। সে ধারাবাহিকতায় আমরা আধুনিক ড্রেজার কিনবো। ফলে মোংলা বন্দরের আশপাশের ড্রাফট সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার হবে। ফলে মাদার ভেসেলগুলো ভিড়তে পারবে বন্দর এলাকায়।

প্রকল্পের আওতায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হবে পরামর্শক খাতে। এছাড়া দুই হাজার একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ কোটি, ১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বোট, ২৬৪ লাখ ঘনমিটার কাটার সাকশন ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং খাতে ব্যয় হবে ৮৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৮৩ দশমিক ৫ লাখ ঘনমিটার ট্রেলিং সাকশন হুপার ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং খাতে ব্যয় হবে ৫১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ১৫ লাখ ঘনমিটার মাটির বেড়িবাঁধ নির্মাণ খাতে ব্যয় হবে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, পশুর চ্যানেল খননের জন্য ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাঁচ বছর নৌরুটের নাব্য সচল রাখতে এ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা পেপার প্রস্তুত করেছি। সূত্র: জাগো নিউজ